হযরত খাদিজা (রা.)-এর জীবনাদর্শ (পাঠ ৪)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আদর্শ জীবনচরিত | NCTB BOOK
173

পরিচয়
মহানবি (স.)-এর প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.)। তিনি বিখ্যাত কুরাইশ বংশের আব্দুল উয্য্যা নামক পরিবারে ৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন খোয়াইলিদ ইবনে আসাদ আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। তাঁর মাতা ফাতিমা বিনতে যায়েদ। বিশ্বের ইতিহাসে যে কয়জন নারী প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। সম্পর্কের দিক থেকে তিনি ও রাসুলুল্লাহ (স.) একই বংশের ছিলেন। তাঁর উপাধি ছিল 'তাহিরা' (পুণ্যবতী)। পারিবারিক সূত্রে সম্পদশালিনী বলে তাঁর সুনাম ছিল সমগ্র আরবজুড়ে।
হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সঙ্গে পরিচয় ও বিবাহ
হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময় লোক নিয়োগ করতেন। তিনি মহানবি (স.)-এর সততা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার কথা শুনে তাঁকে তাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য অনুরোধ করেন। মহানবি (স.) তাঁর ব্যবসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ব্যবসায়িক কাজে মালামাল নিয়ে সিরিয়ায় গমন করেন। এ ব্যবসায় হযরত খাদিজা (রা.) ব্যাপক লাভবান হন।
হযরত মুহাম্মদ (স.) সিরিয়া থেকে ফেরার পর হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর সততা, বিশ্বস্ততা ও উন্নত চরিত্র সম্পর্কে অবগত হন। তিনি যুবক মুহাম্মদ (স)-এর অসাধারণ চরিত্রগুণে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব করেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বয়স ছিল তখন ২৫ বছর। আর হযরত খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর। রাসুল (স.)-এর চাচা আবু তালিবের সম্মতিক্রমে বিশটি উট মোহরের বিনিময়ে এ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর সকল সম্পদের দায়দায়িত্ব রাসুল (স.)-এর উপর ছেড়ে দেন এবং নবি করিম (স.)-কে তাঁর ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করার অনুমতি দেন। রাসুল (স.) অকাতরে সম্পদ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান করেন।
সন্তান-সন্ততি
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর সাথে বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত সুখের। হযরত খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে মহানবি (স.)-এর তিন পুত্রসন্তান-কাছিম, আব্দুল্লাহ ও তাহির এবং চার কন্যা-হযরত জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পুত্রগণ শৈশবেই দুনিয়া হতে বিদায় নেন। তাতে নবি করিম (স.) অত্যন্ত মর্মাহত হন।

ইসলাম গ্রহণ
হযরত খাদিজা (রা.) সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। হেরা গুহায় নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে মহানবি (স.) যখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ছিলেন তখন হযরত খাদিজা (রা.) স্বীয় স্বামীর অবস্থা বুঝতে পেরে বুদ্ধিমত্তার সাথে তাঁকে এ বলে সান্ত্বনা দেন যে, 'ভীত হওয়ার কিছু নেই, আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না, কেননা আপনি আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন, দুস্থ অভাবীদের সাহায্য করেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করেন।' এরপর হযরত খাদিজা (রা.) আসমানি কিতাবে অভিজ্ঞ ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের কাছে তাঁকে নিয়ে যান। ওয়ারাকা হেরা গুহায় সংঘটিত ঘটনা শুনে বললেন, 'ভীত হওয়ার কিছু নেই, তিনি সে 'নামুস' (জিবরাইল) যিনি হযরত মুসা (আ.)-এর নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন।' পরবর্তীকালে মহানবি (স.) আল্লাহর নির্দেশে ইসলাম প্রচার শুরু করলে হযরত খাদিজা (রা.) সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি নবুয়তের দশম বছরে রমযান মাসে ইন্তিকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে নবি করিম (স.) গভীরভাবে শোকাহত হন।

চারিত্রিক গুণাবলি
হযরত খাদিজা (রা.) জাহিলি যুগে জন্মগ্রহণ করেও সৎ চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। কখনো কোনো অন্যায় ও অশ্লীল কাজে যোগ দেননি। মহানবি (স.)-এর প্রতি ছিল তাঁর প্রবল ভালোবাসা। তিনি ইসলাম প্রচারে হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে সাহস ও উৎসাহ প্রদান করতেন। ইসলামের খাতিরে তাঁর সকল সম্পদ দান করার কারণে আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। হযরত খাদিজা (রা.)-এর স্বামীভক্তি ছিল অতুলনীয়। যখন রাসুল (স.) বাইরে যেতেন তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করতেন। আবার তিনি (স.) কখনো বিমর্ষ অবস্থায় বাড়ি ফিরলে হযরত খাদিজা (রা.) তাঁকে সহানুভূতির সাথে সান্ত্বনা দিতেন ও সাহস যোগাতেন।

শ্রেষ্ঠত্ব
মহানবি (স) বলেছেন, 'হযরত খাদিজা (রা.) বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নারী।' (বুখারি)। একদা হযরত জিবরাইল (আ.) হযরত খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুল (স.)-কে বললেন, 'তাঁর প্রভু (আল্লাহ) এবং আমার পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবেন এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবেন।' (বুখারি ও মুসলিম)। আরও বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আয়েশা (রা.)-এর এক অভিমানের জবাবে রাসুল (স.) বলেন, 'না, আল্লাহ খাদিজার চেয়ে কোনো মহৎ নারী আমাকে দেননি। তিনি এমন সময় আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন, যখন সবাই আমাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন। আমার বিপদের দিনে সবাই যখন আমাকে নিরাশ করেছে তখন তিনি আমাকে অর্থ সাহায্য করেছেন।' (মুসনাদে আহমাদ)। অন্য এক হাদিসে নবি করিম (স.) বলেছেন, 'বিশ্বের সকল নারীর উপর চারজনের সম্মান রয়েছে- হযরত মারিয়াম (আ.), হযরত খাদিজা (রা.), হযরত ফাতিমা (রা.) ও হযরত আসিয়া (আ.)।' বর্তমান বিশ্বের নারীগণ যদি হযরত খাদিজা (রা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে, তাহলে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন অনেক সুন্দর হবে।

কাজ: শিক্ষার্থীরা হযরত খাদিজা (রা.)-এর উত্তম গুণাবলির আলোকে একটি তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...